।। এম আর আয়াজ রবি ।।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। তাই সারা বছর দেশী–বিদেশী পর্যটকে মুখরিত থাকে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করেই কক্সবাজারের অগ্রগতি, উন্নয়নের অভিযাত্রা।তাই, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নিয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের মনে আগ্রহ, কৌতুহল ও উদ্দীপনার শেষ নেই। এটি যেন ভ্রমণ পিপাসু ও কক্সবাজারবাসীর জন্য রীতিমতো এক স্বপ্নের আখ্যান। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থকেবে। ঢাকা–চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারে ট্রেন যোগাযোগ পুরোপুরি চালু হলে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে বিপ্লব ঘটবে নিঃসন্দেহে।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পর্যন্ত আগে থেকেই রয়েছে রেললাইন। সেই রেললাইন এখন সম্প্রসারিত হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত পৌছে গেছে। প্রকল্প অনুমোদনের ১ বছর পর শুরু হয় দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮কিমি, রামু থেকে কক্সবাজার ১২কিমি। প্রায় ১০০ কিঃমিটারের রেললাইনে থাকবে ৯টি ষ্টেশন। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির নান্দনিক রেল ষ্টেশন। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর উপর হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। সাতকানিয়ার কেওচিয়ায় হচ্ছে উড়াল সেতু। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ।
এবার ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে রুটে চলাচলের ট্রেন। আগামী মধ্য অক্টোবরের মধ্যে ৬টি বগি নিয়ে শুরু হবে ট্রায়াল ট্রেন যেখানে প্রতি বগিতে ৬০জন যাত্রী বসার সুযোগ রয়েছে।ইতিমধ্যে পটিয়া ষ্টেশনে ট্রায়ালের অপেক্ষায় ইঞ্জিন ও বগিগুলো শোভা পাচ্ছে। অক্টোবরের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্বোধনের পর পরই চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটে আধুনিক উচ্চগতির ট্রেন চলাচল করবে। বাণিজ্যিক ট্রেন চালু হবে আরও কয়েক মাস পর। পাহাড় ঘেরা এ পথে অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট ট্রেন চলবে। এর মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুত্রে জানা যায়,চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজটি করছে। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ঝিলংজায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল এটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
জানা যায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের মধ্যে ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন ধরনের ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে। হাতি চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে আন্ডারপাস। ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শেষ হবে এবং আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দোহাজারী–কক্সবাজার লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
তিনি আরো যোগকরে বলেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে স্বপ্নের এ রেললাইনের উদ্বোধন হবে। এটি পুরো দেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের প্রকল্প। বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইনের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বন্যায় রেললাইনের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাত্র ৫০০ মিটার এলাকার মধ্যে কিছু কিছু অংশ ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে স্লিপারের নিচ থেকে পাথর সরে গেছে। কয়েক জায়গায় সামান্য কিছুটা দেবে গেছে। মূল লাইনের কোনো ক্ষতি হয়নি। মূল লাইনের অবশিষ্টাংশের কাজের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার রেললাইন আগে থেকেই বিদ্যমান। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে গভীর অরণ্যসহ বন–পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি চলে গেছে কক্সবাজারে। লোহাগাড়ার চুনতি অভয়াণ্যের ভেতর দিয়ে এই রেল লাইন চলে যাওয়ার কারনে প্রকল্প নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘ্নে চলাচল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
এ ব্যাপারে দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমাদের ৯০ কিলোমিটার রেল লাইন বসে গেছে। অবশিষ্ট ১২ কিলোমিটারের কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারব। এই ১২ কিলোমিটারের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লিপার আর রেল বিট বসবে। ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে অক্টোবরে আমরা ট্রায়ালরান উদ্বোধন করতে পারব বলে আশা করছি। প্রথমত আমরা এক জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করে দেবো। আশা করছি, আগামী জুনে বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করতে পারবো।
পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওর্য়াকের আওতায় আনতে, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহনে কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে গতি বাড়বে দেশের অর্থনীতির চাকার। সেই সাথে তুলনামূলক চাপ কমবে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর। কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। কারণ তখন সহজেই কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বাড়বে। চাঙা থাকবে পর্যটন ব্যবসা। নতুন করে বাড়বে স্থানীয় কর্মসংস্থান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনের এসি সিটের ভাড়া ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর নন এসি হতে পারে ৭০০ টাকা। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকেও সরাসারি ট্রেন চলবে।
প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য হবে কক্সবাজার। তিনি বলেন, ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগবে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। ঝিনুকের আদলে নির্মিত হয়েছে এই স্টেশন। আইকনিক এই রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, নান্দনিক ডিজাইন আর নির্মাণশৈলীতে গড়ে উঠেছে স্টেশনটি। চারদিকে বসানো হয়েছে গ্লাস। ছাউনিটা পুরো কাঠামোকে ঢেকে রেখেছে। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না এই রেলস্টেশনে। ফলে সবসময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। স্টেশনটির ছাদ ঝিনুক আকৃতির। সামনে বসানো হয়েছে ফোয়ারা। সেখানে বসানো হচ্ছে মুক্তা। ৬টি লিফট ও ২টি চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ শেষ করছেন শ্রমিকরা।
সুবিশাল এই চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলা থেকে নামতে হবে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। আর আসার যাত্রীরা বের হবেন নিচ থেকে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো: আবদুল জাবের মিলন বলেন, আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ–সুবিধা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০জন বিদেশীসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং শ্রমিকসহ মিলে মোট ছয় শতাধিক লোকের চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয় তলা বিশিষ্ট স্টেশনটির সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট করে। রয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা। শুধু এই আইকনিক রেলস্টেশন নয়, এই প্রকল্পের আওতায় আরো ৮টি স্টেশনের মধ্যে তিনটির কাজ শেষ। অবশিষ্ট ৫টির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে পরের স্টেশনটি রামু স্টেশন। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। এসব স্টেশনে থাকছে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। চট্টগ্রামের দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন, যা ছিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো। এখন এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের অর্ধেকই আসেন একদিনের জন্য। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এজন্য কক্সবাজারের ঝিলংজায় নির্মিত আইকনিক স্টেশনে থাকছে আকর্ষনীয় সুবিধা। কক্সবাজার রেল লাইন চালু হওয়ার পর তারা সকালে কক্সবাজার গিয়ে আইকনিক ষ্টেশনে লাগেজ রেখে সারাদিন সৈকতে ঘুরে আবার রাতের ট্রেনে চলে যেতে পারবেন। এজন্য হোটেল বুকিং করতে হবেনা। হোটেল ভাড়া সাশ্রয় হবে।
দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজার ভ্রমণকারী পর্যটকরা নিজেদের মালপত্র রাখার নিরাপদ জায়গা পান না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পে আইকনিক স্টেশন ভবনটি নির্মানের সময় রাখা হয়েছে যাত্রীদের লাগেজ ও লকার সিস্টেমের। এ ছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা, বিশ্বমানের এ স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিনতলায় থাকবে তারকামানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। স্টেশনের ভেতরেই থাকছে কেনাকাটার ব্যবস্থা। থাকছে হলরুম। আবার চাইলেই নির্দিষ্ট লকারে ব্যাগ রেখে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারবেন পুরো শহর। এমন ৫০০টি লকারের ব্যবস্থা থাকছে ষ্টেশন বিল্ডিংয়ে। থাকছে হোটেল ও গোসলখানা। থাকছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। থাকছে সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা পার্কিং এরিয়া, থাকছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ ছাড়াও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা কেন্দ্র।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। র্নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করতে পারবো। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ কিলোমিটার অংশে রেলওয়ে ট্র্যাক বসানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করে উদ্বোধনের লক্ষ্যে অবশিষ্ট অংশের কাজ চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে গত ৩ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ভয়াবহ বন্যায় সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় ৫০০ মিটার রেলপথ বেশ ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইন টেকনিক্যাল টিমের পরামর্শে দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে রেল লাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী অক্টোবরের শেষের দিকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন বলে আমরা শুনেছি। এরমধ্যে দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে কক্সবাজারের ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সমুদ্রসৈকত দেখার জন্য প্রতিবছর অন্তত ১৬ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। রেলপথ চালু হলে এর সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যাবে। তখন পর্যটন খাতে উন্নতির পাশাপাশি রেল খাতেও সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।